নববর্ষ পালনে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি ও কিছু ভ্রান্তধারণা
ওয়াহিদ জামান
ওয়াহিদ জামান
বাংলা নববর্ষ, বাংলা সন তথা বঙ্গাব্দ বাংলাদেশি তথা বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বাংলাদেশের প্রতিটি শহরে-নগরে, গ্রামে-গঞ্জে বাংলা নববর্ষ আনন্দ-উল্লাসে উদযাপিত হয়। তবে, দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমরা মুসলমানরা অনেকেই মনে করি যে, বাংলা নববর্ষ উদযাপন করা উচিত নয়। এটি বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুকরণ। এর চেয়ে অধিকতর ভ্রান্ত কোন ধারণা আর হতে পারে না। বাংলা নববর্ষ সঠিক ও সুষ্ঠুভাবে উদযাপিত হলে তার মধ্যে ইসলাম-বিরোধী কোন কিছু খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাছাড়া বাংলা সনের জন্ম দিয়েছে মুসলমানরাই। মহানবি (সা.) এর মহান স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক হিজরত-ভিত্তিক হিজরি সন অবলম্বনেই এই বাংলা সন প্রণীত হয়েছে। আর, এই সনের জনক কোন অমুসলিম নন। মুগল সম্রাট আকবর তার সভাজ্যোতিষী আমীর ফতেউল্লাহ সিরাজীর পরামর্শে হিজরি ৯৬৩ সনকে বাংলা ৯৬৩ সন ধরে বাংলা সন গণনার নির্দেশ দেন এবং তার আনুকুল্যে ও পৃষ্ঠপোষকতায় জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলা নববর্ষ উদযাপিত হতো। উৎপত্তিগত দিক দিয়ে বাংলা সনের সাথে যেমন মুসলিম ঐতিহ্য জড়িত তেমনি নববর্ষ উৎসবের সাথেও জড়িত মুসলিম সংস্কৃতি। তবে বাংলা নববর্ষ মুসলিম ঐতিহ্যের ভিত্তিতে চালু হলেও মুসলমানদের উদারতার কারণে তা সার্বজনীন অনুষ্ঠানে পরিণত হয়। কিন্তু অতিসম্প্রতিকালে কিছু আজগুবি বিষয় যোগ হয়েছে এ উৎসবে। যা মোটেও বাঙালি সংস্কৃতি নয়। বাঙালিরা কখনোই অশ্লিল ছিল না। রাক্ষস-খোক্কসের মুখোশ দিয়ে সুন্দর চেহারা ঢেকে দেয়ার রুচি বাঙালিদের না। বিরক্তিকর ভুভুজেলা বাজিয়ে কান ঝালাপালা করে দেয়ার মত অসভ্য বাঙালিরা নয়। সুতরাং এসব অরুচিকর কর্মকান্ড পরিহার করে সুস্থ-সংস্কৃতির চর্চা করা উচিত।
ইসলাম স্থানীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে কখনো বাতিল করেনি। যা শুভ, কল্যাণ ও মঙ্গলময়, ইসলাম সেসবকে আদর ও সোহাগ ভরে ধারণ করেছে। ইসলাম শুধু দেখেছে, বিষয়টি আল্লাহর একত্বের সাথে সাংঘর্ষিক কি না এবং ধর্মে নতুন কোন প্রথা প্রচলন করা হচ্ছে কি না। এসব না থাকলে এবং বিজাতীয় অশ্লিল, নোংরা ও কুৎসিত বিষয় না থাকলে ইসলাম মানুষের স্বচ্ছ, সুন্দর এবং স্বাভাবিক প্রবণতার পথে কখনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। ইসলাম প্রকৃতির ধর্ম, স্বাভাবিক ধর্ম। সে কারণে বাঙালির উৎসব প্রবণতার পক্ষে ইসলাম বাধা সৃষ্টি করেনি। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে উৎসাহ জুগিয়েছে। আবহমান কাল ধরে বাঙালিরা উৎসবপ্রবণ, প্রাণবন্ত। উচ্ছল এবং উজ্জ্বল আনন্দ তাদের জীবনের উৎস। সুখ ও শান্তি তাদের নিত্যসঙ্গী। অল্পে তুষ্ট এ ব-দ্বীপের মানুষগুলো আনন্দের অনুসঙ্গ পেলে অনেকটাই বেপরোয়া হয়ে যায়। সে কারণেই আমাদের কাছে নববর্ষ এতো আনন্দের এবং এতো উৎসবের। তাই বলে অশ্লীল আর নিষিদ্ধ পথে তো পা বাড়ানো যায় না। কেননা, প্রত্যেকটি জাতি-গোষ্ঠীর আলাদা আলাদা আচার অনুষ্ঠান সে জাতির পরিচায়ক। এটা বলাই যেতে পারে দূর্গাপূজা দিয়ে হিন্দু সম্প্রদায় কে চেনা যায়, বড়দিন দিয়ে খৃস্টানদের চেনা যায়, মাঘিপূর্ণিমার মাধ্যমে বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে চেনা যায়, ঈদ দিয়ে মুসলিমদের চেনা যায়। এমনিভাবে বাংলা নববর্ষ দিয়ে বাঙালিদের চেনা যায়। সুতরাং বাংলা নববর্ষ পালনে আমাদের সচেতন হওয়া দরকার।